শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৩০ পূর্বাহ্ন

নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নামছে জেলেরা

রাঙামাটি প্রতিনিধিঃ দীর্ঘ চার মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে আজ (১ সেপ্টেম্বর) থেকে কাপ্তাই হ্রদে মাছ আহরণে নামছে জেলেরা। গত ৩১ জুলাই তিন মাসের মৎস্য আহরণের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ শেষ হলেও হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় তিন দফায় ৩০ দিন মেয়াদ বাড়ানো হয়। মেয়াদ শেষে আজ থেকে হ্রদে মাছ আহরণে নামবে জেলেরা। ফলে জেলে পল্লি ও ফিশারি ঘাটে ফিরেছে ব্যস্ততা।

জেলে ও ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, চার মাস মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় প্রত্যাশা অনুযায়ী মাছ ধরা পড়বে। পাশাপাশি অধিক রাজস্ব আদায়ের প্রত্যাশা করছে বিএফডিসি।

৭২৫ বর্গকিলোমিটারের কাপ্তাই হ্রদে কার্প জাতীয় মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নিশ্চিত করা, অবমুক্ত করা পোনা মাছের সুষ্ঠু বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ১ মে থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত তিন মাস মাছ শিকার বন্ধ রাখা হয়। তবে এবার হ্রদে পর্যাপ্ত পানি না থাকায় ১ আগস্টের পরিবর্তে তিন দফায় নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ানো হয়। ১ সেপ্টেম্বর থেকে খুলে দেওয়া হচ্ছে হ্রদে মৎস্য আহরণ।

বিএফডিসির সূত্র অনুযায়ী, হ্রদে ১০৫ এমএসএল পানি থাকলেই অবমুক্ত করা পোনা বেড়ে উঠতে ও মা মাছগুলো প্রাকৃতিক প্রজননের পর্যাপ্ত সুযোগ পায়। তবে এবার কাপ্তাই হ্রদে কম বৃষ্টিপাত ও ভারতের মিজোরাম থেকে পানি না আসায় হ্রদের পানি প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি।

বিএফডিসির হিসাবে হ্রদের রুলকার্ভ অনুসারে এই মুহূর্তে ১০৬-১০৭ এমএসএল পানি থাকার কথা থাকলেও বর্তমানে পানি রয়েছে প্রায় ৯৫ এমএসএলের কিছুটা বেশি। এক মাস আগে এই পানির পরিমাণ আরও ৭-৮ ফুট কম ছিল। এই কারণে হ্রদে অবমুক্ত করা পোনা মাছগুলো বেড়ে উঠার যথেষ্ট পানি না পাওয়ায় বিএফডিসির পরামর্শে জেলা প্রশাসন কাপ্তাই হ্রদে আরও তিন মেয়াদে এক মাস মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ বাড়ায়।

এদিকে প্রত্যাশা মতো পানি না থাকলেও স্থানীয় অর্থনীতি ও জেলে, ব্যবসায়ীদের দুরবস্থা বিবেচনা করে বুধবার (১ সেপ্টেম্বর) থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে কাপ্তাই হ্রদে মৎস্য আহরণের নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের খবরে চেনা কর্মব্যস্ততায় ফিরেছে জেলে পল্লিগুলো।

শহরের অদূরেই নতুন জেলে পল্লি ঘুরে দেখা গেছে, ইতোমধ্যে জেলেরা তাদের নৌকার আনুষাঙ্গিক কাজ শেষ করে প্রস্তত রেখেছে নৌকা। বসে নেই নারীরাও, পুরুষের পাশাপাশি ঘরে বাইরে এখনো চলছে জাল সেলানোর কাজ। পুরাতন জাল সংস্কার বা নতুন জাল সেলাতে ব্যস্ত তারা।

জেলে মতিলাল দাস বলেন, তিন মাসের জায়গায় চার মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষে আমরা এখন প্রস্তুত হ্রদে মাছ ধরতে যাওয়ার জন্য। এবার চার মাস বন্ধ থাকায় আশানুরূপ মাছ পাওয়া যাবে।

জেলে সাজু দাস বলেন, তিন দফায় ৩০ দিন মেয়াদ বাড়িয়ে চার মাস হ্রদ বন্ধ থাকায় আমাদের মানবেতর জীবন কাটাতে হয়েছে। সরকার তিন মাসে ২০ কেজি করে ৬০ কেজি চাল দিয়েছে। বাড়তি এক মাস বন্ধ রেখেছে তার জন্য কোনো চাল দেয়নি। আমরা কিভাবে চলি, সে খবর কেউ রাখেনি।

রাঙামাটি মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উদয়ন বড়ুয়া বলেন, হ্রদে পানির অবস্থা অনুযায়ী তিন মাসের বদলে চার মাস মাছ আহরণ বন্ধ রাখা হয়। আশা করছি এবার ভালো মাছ পাওয়া যাবে। তিনি জানান, জেলেরা হ্রদে মাছ আহরণে সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ করেছেন।

বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন কর্পোরেশনের(বিএফডিসি) রাঙামাটি অঞ্চলের উপ-ব্যবস্থাপক (মার্কেটিং) জাহেদুল ইসলাম বলেন, পানি কম থাকায় আরও এক মাস মাছ আহরণের নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হয়। আজ থেকে সব খুলে দেওয়া হচ্ছে। পানি কম থাকলেও স্থানীয় অর্থনীতিসহ জেলে ও ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থানের বিষয়টি মাথায় রেখে আর নিষেধাজ্ঞা বাড়ানো হচ্ছে না। আশা করছি, এবার চার মাস মাছ আহরণ বন্ধ থাকায় বাকি সময়গুলোতে ভালো মাছ পাওয়া যাবে। এতে সরকারের রাজস্বও বাড়বে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com